নতুন কিসিমের সাংবাদিক

0
830

নিউজ রুমঃ-

তিন দশক ধরে নতুন কিসিমের সাংবাদিক দাবড়ে বেড়াচ্ছে দেশজুড়ে। তারা হলো মানবাধিকার সাংবাদিক! দেশে এ সময়ে মানবাধিকার সংগঠনের হিড়িক পড়ে। একের পর এক জন্মাতে থাকে প্যাডসর্বস্ব মানবাধিকার সংগঠন। তারা সারা দেশে জেলা-উপজেলায় টাকার বিনিময়ে কমিটি দেয়। আর মানবাধিকার সংগঠনের নামে এ কমিটির সদস্যরা নিজেদের মানবাধিকার সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে থাকে। এসব মানবাধিকার সংগঠনের বেশির ভাগেরই কাজ ধান্ধা করা। দেশের নামিদামি ক’টি মানবাধিকার সংগঠন দ্যেতি ছড়ালেও এরা সমাজকে করছে কলুষিত। জেলা কিংবা উপজেলার মানবাধিকার কমিটি নিজেরাই প্রতারণা চক্র গড়ে তুলে। দেশের যেকোনো পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হলে ওই পত্রিকা নিয়ে হাজির হয় অভিযুক্তের বাড়ি। নিজেদের মানবাধিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তাদের ভয়ভীতি দেখায়। কখনো কখনো জোরজুলুম চালিয়ে অভিযুক্তের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। একসঙ্গে এতো লোক দেখে অভিযুক্ত ব্যক্তি ভয় পেয়ে যান। তাছাড়া এসব মানবাধিকার সাংবাদিক পরিচয়ধারীরা প্রাইভেটকার কিংবা মাইক্রোবাস নিয়ে হাজির হন তাদের টার্গেটকৃত জায়গায়। অভিযুক্তকে বলা হতো, পত্রিকায় রিপোর্ট এসেছে। এখন আপনাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। আমাদের কিছু দিলে পুলিশের সঙ্গে মীমাংসা করে দেবো। অভিযুক্ত ব্যক্তিও ভাবতো ওদের টাকা দিয়ে যদি ঝামেলা থেকে বাঁচা যায় মন্দ কি? অভিযুক্ত ব্যক্তি বুঝতেও পারেননি তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন।


এখানে প্রশ্ন মানবাধিকার কর্মীরা কি সাংবাদিক পরিচয় দিতে পারেন? কখনোই পারেন না। তারপরও তারা মানবাধিকার সংগঠনের নামে রমরমা ব্যবসা করার জন্য সাংবাদিক শব্দটি ব্যবহার করতো। নামসর্বস্ব এমন দেড় শতাধিক সংগঠন রয়েছে দেশে। যাদের কাজই হলো প্রতারণা করা। তারা একদিকে সত্যিকার মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে যেমন বিতর্কিত করছে, তেমনি সাংবাদিকদেরও কলঙ্কিত করছে। জানা মতে, একটি তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনের সাধারণ সদস্য হতে হলে সংগঠনকে ফি হিসেবে দিতে হয় টাকা। আর কোনো উপজেলা কিংবা জেলা কমিটি করতে চাইলেও দিতে হয় টাকা। অনেক সময় তারা পত্রিকার রিপোর্ট দেখে উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আলোচনার পর টাকার বিনিময়ে সালিশ বৈঠক করে। আর সালিশের মাধ্যমে আয়কৃত টাকা ভাগাভাগি করে নেয় তারা। আবার মানবাধিকার সংগঠনের কার্ড নেয়ার জন্য দিতে হবে আলাদা টাকা। সারা দেশে জেলা ও উপজেলা কমিটির মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় এই প্রতারক চক্রের একটি বড় অংশ বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার সাংবাদিক। মাঝে মাঝে প্রতারণা করতে গিয়ে কিংবা চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার খবরও পাওয়া যায়। কিন্তু কিছুতেই তাদের দমানো যাচ্ছে না। মানবাধিকার সাংবাদিক নামে প্রতারকদের জন্যও সৎ, নির্ভীক সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। রাজধানী, জেলা, উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা এসবই জানেন। কিন্তু তাদের করার কিছুই থাকে না। কিছু করারও নেই। এমন ঘটনাও ঘটেছে তাদের ধরে পুলিশে দিলেও আইনের ফাঁক গলিয়ে ক’দিন যেতে না যেতেই আবার বেরিয়ে এসে আগের কাজেই লিপ্ত হচ্ছে।
লেখক- জেষ্ঠ সম্পাদক দৈনিক মানবজমিন।

ছবিঃ বিজয় নগর.টিভি